খতমে জালালী পড়ার নিয়ম অনেকেই আমরা জানি না। আর এর জানা-অজানার মধ্যে রয়েছে নানা রকম মতানৈক্যতা। আলেমদের একভাগে উক্ত খতমে জালালী কে পড়ার নিয়ম সহ বৈধ্যতা দেয় আবার বিপরীত দিকে অন্য আলেমগণ খতমে জালালী বিপরীতে অবস্থান নেয়। তবে যাইহোক, আজকের আর্টিকেলে আমরা খতমে জালালী পড়ার সঠিক নিয়ম সহ খতমে জালালী পড়ার ফজিলত সমূহ। কিভাবে খতমে জালালী পড়তে হয়, কখন পড়বেন, কি জন্য পড়বেন সহ ইত্যাদি নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো।
খতমে জালালী কাকে বলে বা এটা কি? মূলত নানা রকম বিপদ-আপদ সহ দূরবস্থা/ভঙ্গুরবস্থা, রোগ-বালাই সহ ইত্যাদি কারণে আল্লাহ ‘الله’ নামটিকে সোয়া লক্ষবার কাগজের টুকরায় এবং সোয়া লক্ষবার ময়দার ছোট ছোট গুলি তৈরি করবে, এবং গুলি তৈরি করার সময় প্রত্যেকবার একটি করে ফু দিয়ে সে গুলিকে কাগজের মধ্যে বেঁধে নদী বা পুকুরে ফেললে সকল রকমের বালা-মসিফত দূর হয়। আর একেই মূলত বলা হয় খতমে জালালী।
এখন খতমে জালালী পড়ার নিয়ম কি? এর ফজিলত সমূহ কি? কখন পড়বেন এটি? মূলত নিম্নে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এবং পাশাপাশি এই নিয়ে থাকা মত-বিরোধগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। চলুন তাহলে আলোচান বিলম্ব না করে খতমে জালালী পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই।
খতমে জালালী পড়ার সঠিক নিয়ম
কিভাবে একজন ব্যক্তি নৈকট্য লাভ ও উপরোক্ত/নিম্নোক্ত ফজিলত সমূহ পাওয়ার জন্য খতমে জালালী পড়বে? এর সঠিক নিয়ম কোনটি? এর জন্য প্রথমে আপনাকে জানতে হবে যে, খতমে জালালী দোয়া কি । মূলত মহান আল্লাহ তা’আলার নামসমূহ ২ ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো- জালালী (তেজস্বী) ও জামালী (সৌন্দর্যময়)। ‘আল্লাহ নাম জালালীর অন্তর্ভুক্ত; এই জন্য ইহার খতমকে খতমে জালালী বলা হয়।
সোয়া লক্ষবার ছোট ছোট কাগজের টুকরাতে আল্লাহ নামটি লিখে এরপর ঐ কাগজে আবার ময়দা বা আটার তৈরি ছোট ছোট গুলি তৈরি করে পেঁছিয়ে দিবেন। উক্ত আমলটি আপনি একা একা করতে পারেন যদি সম্ভব হয়। তবে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই এই ক্ষেত্রে আপনি আপনার আত্মীয় বা পরিচিত বেশ কয়েকজনকে নিয়ে সর্বমোট সোয়া লক্ষ বার উক্ত আমলটি সম্পূর্ণ করতে পারেন। এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, যখনই উক্ত দোয়াটি পড়বেন, ঠিক তখনই একটি গুলি বানানোর পর এটির গায়ে একটি ফু দিবেন এবং আবার পুনরায় দোয়া ও ফু দিবেন। এভাবে এর ক্রম চলতে থাকবে। এরপর যখন সোয়া লক্ষ বার পড়া শেষ হবে, ঠিক তখনই আপনারা উক্ত কাগজে পেঁছানো গুলিগুলোকে একটি মাছ সম্পূর্ণ থাকা পুকুরে নিয়ে ফেলে দিবেন। যখন উক্ত গুলিগুলো পানিতে ফেলবেন, ঠিক তখনই আপনাকে ওজু অবস্থায় থাকতে হবে। অন্যথায় হিতের বিপরীত ঘবে। এভাবেই খতমে জালালী পড়া হয় এবং এবং এটিই হলো খতমে জালালী পড়ার নিয়ম। আশা করি উক্ত বিষয়টি আপনি বোঝতে পেরেছেন।
খতমে জালালী পড়ার ফজিলত সমূহ
এখন স্বাভাবিকভাবে এটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, কেন আমরা খতমে জালালী পড়বো? কিংবা খতমে জালালী পড়ার ফজিলত কি? আচ্ছা, প্রথম অনেকে মনে করে থাকে যে, খতমে জালালী পড়ার কারণে মানুষগণ নানা রকম বিপদ আপদ হতে মুক্তি পায়। পাশাপাশি নদী-ভাঙ্গন সহ কঠিন অসুখ,-অসুস্থতা, বিপদ আপদ সহ ইত্যাদি রকমের ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যেই খতমে জালালী পড়ে থাকে।
আশা করি আপনারা এতোক্ষণে বোঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, কেন মানুষগণ খতমে জালালী পড়ে থাকে অথবা খতমে জালালী পড়ার ফজিলত সমূহ কি কি।
খতমে জালালী নিয়ে বিতর্ক
এমন অনেক আলেম পেয়েছি যিনি এই খতমের নাম ও পদ্ধতি শুনার সাথে সাথে ‘‘লা হাওলা…’’ পড়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা তৎক্ষণাৎ খতমে জালালী পড়া নিয়ে দ্ধি-মত পোষণ করেছেণ। কেননা নদীর পানিতে থাকা মাছকে নিয়ে এখানে যে সমস্ত কর্ম হয়ে থাকে, তা মোটেও একজন মুসলিম মুমিনের নিকট কাম্য নয়।
অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে, সামান্য কিছু টাকা বা অর্থের জন্য কিছু আলেম এই খতমে জালালী নাম দোয়া বা আমল নিয়ে মিথ্যা রটনা করছে। মূলত এর কোনো ভিত্তি নেই শরিয়াতে। বরং এটি হলো কোরআন-সুন্নাহ থেকে দূরে গিয়ে মানুষের তৈরি আমল। যা স্পষ্ট বিদাত। আর এসব কাজে অনেকাংশে বিধর্মীদের ন্যায় হয়ে থাকে। যা ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে ইমান হেফাজত করার তৌফিক দান করুক এবং একই সাথে সবাইকে সহি বোঝ দান করুক, আমিন।
খতমে জালালী পড়ার নিয়ম নিয়ে শেষ কথা
খতমে জালালী পড়ার নিয়ম সহ এর ফজিলত ও এই নিয়ে থাকা বিতর্কগুলো সম্পর্কেও আজকের আর্টিকেলে আলোচনা হয়েছে। আশা করি একজন পাঠক, খতমে জালালী দোয়া ও এর আনুসাঙ্গিক সকল কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত একটি ধারণা পেয়েছে।
ইতিমধ্যে আপনাদের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট যে, এর ফজিলত ও পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। মূলত আমরা প্রতিনিয়তই চলা-পেরায় নানা রকম বিপদ-আপদের সাথে লড়ে থাকি। যা থেকে আমরা সবাই খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারি সামান্য একটি কাজ করে। আর এটি হলো খতমে জালালী দোয়া পড়ে। উক্ত দোয়ায় রয়েছে বিরাট ফজিলত। যা আমরা ইতিপূর্বে জেনে গেছি।
আর পাশাপাশি খতমে জালালী নিয়ে রয়েছে নানা রকম মত বিরোধ। অর্থাৎ, অনেকে একে বিদাত ও ইসলাম বহির্ভূত কাজ বলে আখ্যায়িত করে আবার অনেকে বলে এটা উক্ত নিয়মে পড়া ঠিক নয়। তবে যাইহোক, একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদেরও উচিত, কোনো একটি ফজিলত কিংবা কাজ করার পূর্বে তার ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া।
সর্বপরি, আশা করি আজকের আর্টিকেল অর্থাৎ খতমে জালালী পড়ার নিয়ম ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরে বেশ চমৎকারভাবে উপকৃত হতে পেরেছেন।
আমি ইকরামুল হক। শুধু মাত্র নিজের প্যাশনেট থেকে ব্লগিং করছি। চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে এবং সেই সাথে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। তারই ধারাবাহিকতায়, প্রতিনিয়ত আমার লিখনী প্রকাশ করছি Socialalo তে।